মুহাম্মদ দিদার হোসাইন:: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনায় দ্বাম্ভিকতা শুভ নয়, আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার শিক্ষার মহান শিক্ষক ছিলেন রহমাতুল্লিল আলামীন নবী মুহাম্মদ(সাঃ)।
সাম্প্রতিক আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে হত্যা রাহাজানী,লুণ্ঠন,শোচন,নির্যাতন,নিপিড়ন, মদ-জোয়া, ধর্ষণ সহ মূর্খ্যতায় ভরপুর হয়ে মানবতা যখন পাশবিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ঠিক সেই সময় কালের ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র মক্কা নগরীতে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর শুভাগমন ঘটে।
নবুওয়ত প্রাপ্তির দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত হেকমত ও নসিহতের মধ্যদিয়ে জীবন সংগ্রাম করে চলমান হত্যা রাহাজানি,ধর্ষণ,মদ-জোয়া,জেনা ব্যাবিচার,জুলুস, অত্যচার,নির্যাতন -নিপিড়ন,পরস্পর ও গোত্রে -গোত্রে হানাহানি,দ্বান্দ্বিকতা,হিংসা বিদ্বেষ সহ সকল প্রকার মূর্খতা ও দাম্ভিকতাকে কবরস্থ করে বিশ্বের মানব জাতিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার শিক্ষা দিয়েছিলেন রহমাতুল্লিল আলামীন নবী মুহাম্মদ (সাঃ)।তিনি ছিলেন লুণ্ঠিত,বঞ্চিত, শোচিত মানবতার পূনরুজ্জীবন দানকারী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষার মহান ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
মক্কা বিজয়ের পর উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) গণকে সর্বপ্রথম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষাই দিয়েছিলেন রাসুল সাঃ)।সেইদিন তিনি বলেছিলেন, আজ পবিত্র মক্কা নগরী সকল প্রকার অজ্ঞতা, বর্বরতা,মূর্খতা,দুনিয়াবী দাসত্ববোধ ও অসাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের গ্লানি থেকে লুণ্ঠিত ও বিবর্জিত মানবতাকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
সাহাবী (রাঃ)গনের অনেকেই নিশ্চুপ থাকলেও কেউ কেউ কিছু বলেছিলেন,কিন্তু রাসুল (সাঃ)কে যেহেতু সারাজাহানের জন্যে "রহমাতুল্লিল আলামীন"নবী হিসেবে মহান আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়াতায়ালা)দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন সেহেতু তিনি সেইদিন"রহমাতুল্লিল আলামীন"এর পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন,হে আমার সাহাবী গণ! তোমরা তোমাদের নিজের জান,মাল, পরিবার -পরিজন ও আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপারে যেভাবে নিজেকে জিম্মদার মনে করো ঠিক সেই রূপ আচরণ তাদের ব্যাপারেও করো যারা এখনো পর্যন্ত ইসলাম এর ছায়াতলে আসার সৌভাগ্য লাভ করেনি (সুবহানাল্লাহ)।
শুধু এতোটুকুই নয় বরং সেইদিন তিনি অন্য ধর্মাবলম্বীদের জান,মাল,ধন-সম্পদ,তাদের সাথে আচার-আচরণসহ সব কিছুই মুসলমানদের কাছে নিরাপত্তার শিক্ষা দিয়েছিলেন রাসুল (সাঃ)। হাদিস শরীফ বিভিন্ন বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, রাসুল (সাঃ)মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন আজ থেকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জান -মাল,পরিবার- পরিজন ধন-সম্পদ সবকিছুর নিরাপত্তার ব্যবস্থার দায়িত্ব আমি রাসুল তোমাদের উপর ন্যস্ত করলাম।তোমরা নিজের চেয়ে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে স্বজাগ থেকো।তাদের সাথে সদাচরণ কর।এমনকি দাম্ভিকতার চেতনাকে পদদলিত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা দেন রাসুল (সাঃ)।খালীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ)ইসলামের শীতল ছায়ায় আসার পর যখন তাঁর মা-মুশরিকা অবস্থায় তাঁর সাথে যোগাযোগ করতেন,তখন আবু বকর (রাঃ) আল্লাহর রাসুল (সাঃ)'র দরবারে এসে বলেছিলেন,"ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)"আমি মুসলিম হয়েছি কিন্তু আমার মা- এখনো পর্যন্ত ইসলামের সৌভাগ্য লাভ করেননি,কিন্তু তিনি আমার কাছে আসেন,এমতবস্থায় আমি আমার মায়ের সাথে কিরূপ আচরণ করব?
উত্তরে রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন,হে আবু বকর!তিনি তোমার মা,তাঁর সাথে তুমি সব সময় সদাচরণ করবে, কক্ষনও তোমার মায়ের মনে তুমি কষ্ট দিতে পারবেনা, এমনকি একটা কথার দারাও নয়! যদি সে মুশরিকাও হয়ে থাকেন।এই থেকে সুস্পষ্ট প্রতিয়মান হয়,রাসুল (সাঃ)ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার মহান শিক্ষক।
রাসুল (সাঃ) কখনো অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি কখনো অবিচার করেননি,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শিক্ষার মডেল শিক্ষক ছিলেন রাসুল (সাঃ)।জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করণ,অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর জুলুম নির্যাতন,তাদের ধন-সম্পদ লুন্ঠন করার বিষয়কে রাসুল (সাঃ) কখনো সমর্থন করেননি।সুতরাং জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার অপচেষ্টা,তাদের জান-মালের ক্ষতি সাধন করার নাম ইসলাম নয় বরং যারা ইসলামের নামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার মানসে জঙ্গি তৎপরতা মেতে উঠে,কিংবা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে বোমাবাজি সহ জঙ্গি হামলা করে মানুষ হত্যা করে,তারা ইসলামের চরম শত্রুও বটে।যেহেতু রাসুল(সাঃ) এমন আচরণকে কখনো সমর্থন করেননি।এমনকি আল্লাহ পাক খুব সুন্দর করে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তোমরা হেকমত ও উত্তম নসিহত সহকারে মানুষদের আল্লাহর পথে ডাকো।অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যেই ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে।সুতরাং পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পাকের আলোকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে,বোমাবাজি ও জঙ্গিবাদীর নাম ইসলাম নয়।আর যারা ইসলামের নামের ইহুদিবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে ওইসব জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করে মানুষ হত্যা করে,দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে তারা ইসলামের চরম শত্রু এমনকি তারা মুসলমানও হতে পারে না।
হিন্দু ধর্মীয় পূজা উৎসবে জাঁকজমক আয়োজন!
ধর্মীয় রেওয়াজ অনুযায়ী সারা দেশজুড়ে চলছে হিন্দু ধর্মীয় বড় উৎসব "শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব"এই উৎসবে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কেনা-কাটা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে থাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছোট -বড় নারী-পুরুষ সবাই।এতে প্রতিবেশী হিসেবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার নিমিত্তে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সাহায্য সহ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে থাকেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীয় বিভিন্ন সামাজিক,রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ বহু বিশিষ্ট জনেরা।এই উপস্থিতিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও বটে।
হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মদ্যপান নিষিদ্ধে কতৃপক্ষের আন্তরিক পদক্ষেপ জরুরি!
একটু ভিন্ন মনে হলেও সত্য যে,ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে মদ্যপান যে বা যারাই করে তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকতে হিন্দু ধর্মীয় নীতি নির্ধারকদের।কারণ মদ্যপান একজন মানুষের স্বাভাবিক মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটাতে সহযোগিতা করে।আর এই মস্তিষ্ক বিক্রিত মানুষ গুলোই অসাম্প্রদায়িকতার প্রবনতা সৃষ্টির সহায়ক হওয়াটাই স্বাভাবিক।তাই তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিস্থিতিকে সুশৃঙ্খল ও শান্তি পূর্ণ রাখতে মদ্যপান ও মাদক সরবরাহ কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একান্তই জরুরি।আর এই ক্ষেত্রে প্রশাসনের সুদৃষ্টিও একান্ত কাম্য।
এদেশ স্বাধীন সার্বভৌমত্বের দেশ।১৯৭১ সনে এদেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষ ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল,এতে ত্রিশ শহীদের রক্ত ও অসংখ্য মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে লাল সবুজ পতাকার"স্বাধীন বাংলাদেশ।এই অর্জনে কোনো ধর্মের মানুষের একক কোনো ভূমিকা ছিলনা।মাতৃভূমি রক্ষায় সকল ধর্মের মানুষের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকায় অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌমত্বের বাংলাদেশ।সুতরাং রাসুলে পাক(সাঃ) এর শিক্ষা ও দেশের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করলে এটাই প্রতিয়মান হয় যে,আল্লাহর জমিনে বসবাসের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ধর্মের মানুষেই সমান অধিকার রয়েছে।
আসুন দেশে চলমান সংকটাপন্ন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল ও বহিঃ বিশ্বে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা লক্ষ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছায়াতলে থেকে সম্প্রীতি ধংসে কারা মেতে উঠে তাদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করি এবং পরস্পরে হিংসা,বিদ্বেষ ও ধর্মীয় বিবাদ পরিত্যাগ পূর্বক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই।
সাংবাদিক মুহাম্মদ দিদার হোসাইন
১৬৯০-০৬৬৭২৩/০১৮১৮-৮৭৯২৭৬
তারিখঃ-০৪-১০-২০২২ ইং-