নিউজ ডেস্ক :
আজ ২ জুলাই (২০২৩) রবিবার দারুল কারীম মাদরাসা ও বাঁশখালী মডেল মাদরাসার পরিচালক সাংবাদিক মাওলানা শফকত হোসাইন চাটগামী সাহেবের ৪৫ তম জন্ম দিন। ৪৪ বছর আগে ১৯৭৯ সালের এই দিনে বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার নাম মরহুম মাওলানা রৌশন আলী। দাদা মরহুম আবদুল হাকিম। চাম্বল মাদরাসায় সাবেক মুহতামিম পুর্ব বড়ঘোনা নিবাসী মরহুম মাওলানা ফজল আহমদ সাহেব রহ. হচ্ছেন শফকত চাটগামীর নানা। ৫ ভাই, ৫ বোনের মধ্যে তিনি হচ্ছেন ৮ম। ১৯৯৯-২০০০ সেশনে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন তিনি। ছাত্র জীবনেই বিভিন্ন মসজিদে ইমাম খতীব হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ৯৩-৯৪ সালে সাতকানিয়া দেওদিঘী সংলগ্ন জামে মসজিদে, ৯৫-৯৬ সালে ছাত্র জীবনে বাঁশখালী দারোগা বাজার জামে মসজিদ, ৯৭ সালে মাদারীপুর সদরের তায়ানি বাড়ি জামে মসজিদ এবং মাদারীপুর জজকোর্ট জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত শফকত হোসাইন চাটগামী জামেয়া দারুল মা আরিফ ইসলামিয়ায় শিক্ষা পরিচালনা বিভাগের অফিস সম্পাদক হিসেবে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। সাপ্তাহিক ইসলাহ ও সাপ্তাহিক লিখনীর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু। পরবর্তিতে ২০০৩ সাল থেকে দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক নয়াবাংলা এবং ২০০৯ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রধান দৈনিক যুগান্তরে বাঁশখালী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি। এছাড়া দারুল মা আরিফ থেকে প্রকাশিত মাসিক আল হক, হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম, ঢাকা থেকে প্রকাশিত মাসিক কাবার পথে, সাপ্তাহিক লিখনী, সাপ্তাহিক ঊষা, সাপ্তাহিক জাগো প্রহরী এবং দৈনিক ইত্তেসালে কাজ করেন। ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ৫ বছর নাজিরহাট বড় মাদরাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক দাওয়াতুল হক পত্রিকার তিনি নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া ২০০২ সাল থেকে তার সম্পাদনা ও মালিকানায় "অভিযান পত্রিকা" নামে একটি মাসিক এবং ২০১০ সাল থেকে "বাঁশখালীর খবর" নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পরে বাঁশখালীর খবর পত্রিকাটি জাতীয় সাপ্তাহিক জীবন্ত কাগজের সাথে যুক্তভাবেও প্রকাশিত হয়। তিনি জীবন্ত কাগজেরও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করেন। নিজ এলাকা গন্ডামারা বড়ঘোনা ছাড়াও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বেশ প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। সে সময় ২১ হাজার ৬৯১ ভোট পেয়ে ৩য় স্থান দখল করলেও তার ভোট দেখানো হয় ১১ হাজার ৬৯১ ভোট। ছাত্রজীবন থেকেই পীর সাহেব চরমোনাইর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতির সাথে জড়িত শফকত হোসাইন চাটগামী ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের মাদারীপুর জেলা প্রচার সম্পাদক, ঢাকার লালবাগ থানার আহবায়ক এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে মুরুব্বি সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের তিনি (২০০১, ২ ও ৩ সালে) চট্টগ্রাম মহানগরীর সহকারী প্রচার সম্পাদক এবং প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ সাংগঠনিক জীবনে তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রশিক্ষণ সম্পাদক, ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক, সিনিয়র সহ সভাপতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৪ সাল থেকে ৩ মেয়াদে ৬ বছর আন্দোলনের জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাঁশখালীর আলেম ওলামাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় সাংবাদিক মাওলানা শফকত হোসাইন চাটগামী অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বাঁশখালী উপজেলা জয়েন্ট সেক্রেটারী হিসেবে একই সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাঁশখালী ওলামা পরিষদের সাবেক সহ সভাপতি এবং বর্তমানে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া বাঁশখালী কওমী মাদরাসা সংস্থার প্রভাবশালী সদস্য হিসেবেও শফকত হোসাইন চাটগামী দায়িত্বরত আছেন। ২০১৫ সালের ৩ রমজান বাঁশখালী পৌর সদরে "দারুল কারীম মাদরাসা ও এতিমখানা" নামে একটি ব্যতিক্রমী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। মাদরাসার উদ্যোগে বাঁশখালী পৌর শহরে প্রথম বারের মত ৩ দিন ব্যাপী মাহফিলের আয়োজন করেন। মাহফিলে মহিলা প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করাও এই এলাকায় বলতে গেলে প্রথম এবং একমাত্র। মাহফিলে দেশের খ্যতনামা বড় বড় আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ তাশরীফ আনেন। মাহফিলকে ঘিরে বাঁশখালীতে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিগত ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ থেকে বাঁশখালী মডেল মাদরাসা নামে দারোগা বাজারে আরো একটি মাদরাসার কার্যক্রম শুরু করেন।
সাংবাদিক মাওলানা শফকত হোসাইন চাটগামী ২০০০ সালের ৫ মে বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হন। সম্পর্কে তিনি হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক বড় মুহতামিম খ্যাত আল্লামা শাহ আবদুল ওহাব সাহেব হুজুর রহ. এর খলীফা ও হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক সিনিয়র শিক্ষক বাঁশখালীর সরলের প্রখ্যাত আলেম পীরে কামেল আল্লামা শাহ নুর মোহাম্মদ সাহেব হুজুরের ভগ্নিপতি। পারিবারিক জীবনে তিনি ৬ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক। তার প্রথম ৪ পুত্রই দারুল কারীম মাদরাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। বড় ছেলে হিফজ শেষ করে চন্দ্রঘোনা ইউনুসিয়া মাদরাসায় জামাতে উলায় অধ্যায়নরত। বাবা মাওলানা রৌশন আলী ২০০৬ সালে ইন্তেকাল করেন। তিনি ভারতের ছাহারমপুর মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা উপকূলীয় এলাকা বড়ঘোনার খ্যাতিমান আলেম ছিলেন। নানা মাওলানা ফজল আহমদ শাহ রহ. এর হাত ধরেই সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামীর লেখাপড়া ও এগিয়ে চলার হাতেখড়ি। ২০০৮ সালে নানা মাওলানা ফজল আহমদ শাহ রহ. ইন্তেকাল করেন। জলদী বড় মাদরাসা ও লালখান বাজার মাদরাসার সাবেক সিনিয়র উস্তাদ ও নুরানী মুয়াল্লিম প্রশিক্ষক মাওলানা খালেদুর রহমান সাহেব হচ্ছেন সাংবাদিক শফকত চাটগামীর বড় ভাই। তাছাড়া আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে প্রায় শতাধিক বড় বড় আলেম রয়েছে তার পরিবারে।
লেখালেখি, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সংগঠন, শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশায় সফল এই মানুষটির আজ জন্ম দিন। তার জন্মদিনে রইল দারুল কারীম মাদরাসা ও বাঁশখালী মডেল মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও দোয়া। আল্লাহ তাকে হায়াতে তৈয়্যেবা দান করুন, আমিন।