দিদার হোসাইন,স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সরল,বাহারছড়া সহ বেশ কিছু উপকূলীয় এলাকার মৎস্য সমিতির বিরুদ্ধে সমুদ্রে মাছ ধরার জাল বসানোর ফার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয় জেলেরা।
বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের বোট মালিক ও জেলে পরিবার গুলোর একমাত্র আয়ের উৎস হল সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করা।ওই এলাকার জেলেরা প্রতিনিয়ত মৎস্য স্বীকারে ছুটে যায় সমুদ্র পানে।আর সমুদ্র থেকে মাছ স্বীকার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করে পরিবারিক খরচ বহন করে থাকে জেলেরা।
কুতুবদিয়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারার জেলেরা সমুদ্রে যার যার মতো করে শানিপূর্ণ ভাবে মাছ ধরে থাকে। মৎস্য জীবিদের নিয়ন্ত্রণের জন্যে বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে মৎস্যজীবি ও মৎস্য আহরণকারী সমিতি।বিশেষ করে সরল ইউনিয়নে মধ্যম সরল ডেপাপাড়া ও চরপাড়া মৎস্য আহরণকারী সমিতি ও সরল ইউনিয়ন মৎস্য সমবায় সমিতি এবং সরল উপকূলীয় মৎস্যজীবি ও মৎস্য আহরণকারী সমিতি নামে তিনটি মৎস্য সমিতি রয়েছে।
এরই মধ্যে মধ্যম সরল ডেপাপাড়া ও চরপাড়া মৎস্য আহরণ সমিতি এবং সরল ইউনিয়ন মৎস্য সমবায় সমিতি ও বাহারচড়ার কিছু প্রভাবশালীরা স্থানীয় চিহ্নিত জলদস্যুদের নিয়ে সমুদ্রে ফার বাণিজ্য করে বিভিন্ন বোট মালিক ও জেলেদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মর্মে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় জেলেরা।
বিশেষ করে সরল চ্যানেলের সীমানায় উল্লেখিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যরা আনোয়ারার গহিরা ও বাঁশখালীর বাহারচড়া সহ বহিরাগত জেলেদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ওই ফার বাণিজ্য করে যাচ্ছে।এতে ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে স্থানীয় জেলেরা।
বাঁশখালীর গণ্ডামারা -বড়ঘোনা,সরল,বাহারছড়া, খানখানাবাদ,প্রেমাশিয়া সহ বেশ কিছু মৎস্য সমিতি রয়েছে।বিশেষ করে সরল ইউনিয়নে রয়েছে তিনটি মৎস্য সমিতি।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে পরিদর্শন কালে,উঠে আসে উল্লেখিত সরল ইউনিয়ন মৎস্য সমবায় সমিতি ও মধ্যম সরল ডেপাপাড়া ও চরপাড়া মৎস্য আহরণ সমিতির ফার বাণিজ্যের সত্যতা।এছাড়াও বাহারচড়া ও রত্নপুরের বেশ কয়েকজন বোট মালিকরা স্থানীয় জলদস্যুদের নিয়ে খানখানাবাদ এলাকার বোট মালিক ও জেলেদের উপর জুলুম নির্যাতন করে যাচ্ছে , এমন খানখানাবাদের বোট মালিক ও জেলেদের।
পরিদর্শন কালে খানখানাবাদের বিদ্যাসাগর জ্বলদাশ, বোট মালিক সিরাজুল ইসলাম,টেম্পু বোট মালিক রফিক আহমদ,দিদারুল আলম,মোঃ ছগীর,নেজাম উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন সহ স্থানীয় বোট মালিক ও জেলেরা অভিযোগ করে বলেন,বাঁশখালীর সরল ও বাহারচড়া ইউনিয়নের কয়েকটি মৎস্য সমিতির সদস্যরা স্থানীয় কিছু জলদস্যুদের হাতে নিয়ে স্থানীয় জেলেদের উপর জুলুম- নির্যাতন শুরু করেছে।বিশেষ করে বাহারচড়া ও রত্নপুরের সেলিম, এমরান,আমির হোসেন, কায়সার,নুরুল কাদের প্রঃ লুট্টু,মঞ্জুর,শাহাব উদ্দিন, সোলাইমান,আব্দুল মালেক ও হসাই লেদু,মুবিন,মামুন সহ আরো বেশি কিছু লোক স্থানীয় প্রভাবশালী জলদস্যুরদের নিয়ে স্ব-স্বস্ত্র বিগত মাস খানেক আগে আমাদের বোট, টেম্পো বোট ও জাল এবং মাছ ধরার অন্যান্য সরঞ্জামাদি সহ তাদের সীমানায় জালের ফার বসাতে পারবেনা বলে গালিগালাজ সহ অস্ত্রের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।পরে বোট ফেরত দিলেও জাল ও বোটের সরঞ্জামাদি সহ প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার আমাদের মালামাল উপরোক্ত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র সদস্যরা ফেরত দেয়নি।এই নিয়ে বোট মালিক মোহাম্মদ ছগীর,রুহুল আমিন,সেলিম ও জালাল আহমদ বিগত ২৭ জুলাই ২২ ইং- বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন এবং বিগত ২ আগস্ট ২১ ইং তারিখে বোট মালিক দিদারুল আলম বাদী হয়ে বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর আরো একটি অভিযোগ দায়ের করলেও এতেও কোন ধরনের সুরহা না পাওয়ায় উপকূলীয় মৎস্য শিকার ও বাজারজাত করণ সমিতির সভাপতি গাজী সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী,বোট মালিক ও জেলেদের জানমাল সামুদ্রিক নিরাপত্তা রক্ষার নিমিত্তে আরো একটি অভিযোগ দায়ের করিলেও বাহারচড়ার বোট মালিক ও জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না বলে জানান খানখানাবাদের বোট মালিক ও জেলেরা।ফার বাণিজ্যকারী সিন্ডিকেট চক্র সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় ফলে কয়েক বার থানা পুলিশ সদস্যরা সার্ভেয়ার দ্বারা সীমানা নির্ধারণ করার চেষ্টা করলেও সিন্ডিকেট চক্র সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোন ধরনের আইনের তোয়াক্কা করছেনা এমন অভিযোগ বোট মালিক ও জেলেদের।
অপরদিকে সরলের মধ্যম সরল ডেপাপাড়া ও চরপাড়া মৎস্য আহরণকারী সমিতি এবং সরল ইউনিয়ন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সদস্যরা স্থানীয় চিহ্নিত জলদস্যুদের নিয়ে সমিতির আইন লঙ্ঘন করে বহিরাগত জেলেদের কাছ থেকে সরল চ্যানেলের বাহিরের সীমানায় লাগিত হিসেবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফার বাণিজ্য করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয় বোট মালিক ও নিরীহ জেলেরা।তারা চিহ্নিত জলদস্যুরদের নিয়ে সরল চ্যানেলের বাহিরের সীমানায় স্থানীয় জেলেদের ফিশিং বোট গুলোকে কোন ভাবেই জাল বসাতে দিচ্ছে না।
বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সরল এলাকায়, খানখানাবাদ ও আনোয়ারার গহিরা সহ বিভিন্ন এলাকার বোট গুলোকে ফার বসানোর সুযোগ করে অবৈধ বাণিজ্য করে যাচ্ছে।এতে ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে স্থানীয় বোট মালিক ও জেলেরা।
মধ্যম সরলে ডেপাপাড়া ও চরপাড়া মৎস্য আহরণ কারী সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান ও সরল ইউনিয়ন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান এর যোগাযোগ করলে তারা ফার বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেন। এসময় মুজিবুর রহমান বলেন,আমাদের সমিতিতে ১৫০ জন সদস্য রয়েছে,এবং ১৭ টি বোট আছে তারাই জাল বসায়।তবে খানাখানাবাদ ও গহিরা এলাকার কিছু বোট মালিকরা সমিতির সদস্য হওয়ার শর্তে জাল বসায়। স্থানীয় জেলেদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের জাল বসানোর দেয়ার বিষয়টি সমিতির আইনের আওতায় পড়ে কিনা? জানতে চাইলে মুজিব বলেন, আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী আমাদের সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন বলে জানান মুজিব।
সরল ইউনিয়ন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ বলেন,আমাদের সমিতির ১০-১২ টি বোট আছে আর কিছু বোট বর্গা হিসেবে সামান্য কিছু খরচের মাধ্যমে জাল বসায় বলে জানান মাহফুজ।সরলের বোট মালিক সালাউদ্দিন মানিক বলেন,ফার বাণিজ্য বন্ধের জন্যে বিগত ২১ ইং সনে আমি একটি মামলা করেছিলাম।যার ফলে ফার বাণিজ্য সিন্ডিকেট চক্র আমার বিরুদ্ধে নানান অযুহাতে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে অনেক হয়রানি করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালের আগস্টের দিকে বাঁশখালী এবং আনোয়ারার জেলেদের মধ্যে জাল বসানোর সীমানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই সময় সীমানা বিরোধের জেরে বাঁশখালী খানখানাবাদ এলাকার এক জেলেকে মারধর করে সমুদ্র নিক্ষেপ করে আনোয়ারার কিছু জেলেরা।এই নিয়ে বাঁশখালী ও আনোয়ারার জেলেদের মধ্যে বিরোধ উত্তেজনা বেঁড়ে যায়।একপর্যায়ে ওই বিরোধ নিরসন কল্পে বাঁশখালী -আনোয়ারা নির্বাহী কর্মকর্তাদয়ের নেতৃত্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়।ওই বৈঠকে বাঁশখালী -আনোয়ারা জলসীমানা বিরোধ মীমাংসা হলেও এখনো বন্ধ হয়নি সরল ও বাহারচড়ার ফার বাণিজ্য।
Leave a Reply