মুহাম্মদ দিদার হোসাইনঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার জন্য ২০০৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন চা-বাগান কতৃপক্ষ, সম্প্রতি স্কুলটি সেমিপাকা করতে নির্মাণ কাজ শুরু করলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে পুরো স্কুলটি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে প্রভাবশালীরা, দায়সারাতে ঢাল হিসেবে ছাত্র-জনতার নাম ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।
৫ অক্টোবর (শনিবার) সরেজমিনে পরিদর্শনকালে নির্মাণাধীন স্কুলটির পাকা দেয়াল ভেঙ্গে দেয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
বাঁশখালী উপজেলাধীন পূর্ব পুকুরিয়ার চাঁদপুরের পাহাড়ি এলাকার ৩ হাজার ৪৭২.৫৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত বেলগাঁও চা বাগান।সরকারের সাথে চুক্তি অনুসারে উক্ত জায়গার খাজনা আদায় করে আসছিল চা-বাগান কতৃপক্ষ। বাগানটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অন্তত আট শতাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বাগানে কর্মরত অসহায় শ্রমিক পরিবারের শিশুদের পড়ালেখায় আগ্রহী করে তুলতে ২০০৯ সালে বাগানের এ স্কুলটি স্থাপন করেন কতৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্কুলটির শিক্ষকদের বেতন ভাতাসহ সব খরচ বহন করে আসছিল কতৃপক্ষ। তবে স্কুলটিতে পড়ালেখার মনোরম পরিবেশ না থাকায় কতৃপক্ষ স্কুলটি সেমিপাকা করতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।এতে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ইন্ধনে উশৃঙ্খল শ্রেণির কিছু ছেলেরা এই তান্ডব চালিয়েছে বলে শ্রমিক পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ছাত্র-জনতার
চা-বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, আমাদের শিশুরা বাহিরের কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারেনা, কারণ স্কুল -মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান গুলো অনেক দূরে। চা-বাগান এরিয়াতে যে স্কুলটি কতৃপক্ষ করেছে ওই স্কুলটি পাকা ভবন না হওয়াতে মাটির পরিবেশে বসে পড়ালেখা করতে হয়। এতে শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই শ্রমিকদের অনুরোধক্রমে চা-বাগানের ম্যানেজার সাহেব স্কুলটি সেমিপাকা করতে কাজ শুরু করেন। চতুর্পাশের দেয়াল আনুমানিক ৩ ফিট পরিমাণ উঠার পর হঠাৎ কিছু উশৃংখল টাইপের ছেলেরা গিয়ে সেটি তাদের খেলার মাঠ বলে দাবি করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে স্কুলের পাকা দেয়াল ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বেশি কিছু লোক বলেন,বাগানের জায়গাতে বাগান কতৃপক্ষ স্কুল নির্মাণ করতেছে কিন্তু বাহিরের লোকজন গিয়ে অন্যায় ভাবে স্কুল নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়ে স্কুলের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে ওই এলাকার ফারুক মেম্বারের লোকজন এ তান্ডব চালিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এসময় তারা আরও বলেন, এলাকার ছেলেরা চা-বাগানের এরিয়াতে দিনের বেলায় খেলা ধুলা করে। সন্ধ্যা নেমে আসলেই বহিরাগত খারাপ প্রক্রিয়ার কিছু লোক সেখানে গাঁজা ও মদপানসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল বলেও জানিয়েছে তারা।এ চা-বাগানের শ্রমিক ও কর্মচারীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা,বাসস্থান ও শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি শ্রমিকদের সন্তানদের পড়া-লেখায় আগ্রহী করে তুলতে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কতৃপক্ষ। স্কুলটি সম্পূর্ণ রূপে বাগান কতৃপক্ষের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। এরই মধ্যে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে স্কুলটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে দেয়াল ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও প্রশাসনের কোনো ধরনের পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অপরদিকে ছাত্র-জনতারা স্কুল ভাংচুর করেছে বলে দাবি করে মেম্বার ফারুক বলেন, বিগত ১০-১২ বছর ধরে এলাকার ছেলেরা এই মাঠে ফুটবল -ক্রিকেট খেলে আসছিলো, কিন্তু চা-বাগান কতৃপক্ষ মাঠে এসে স্কুল নির্মাণ করাতে ছাত্র-জনতারা ভাংচুর করেছে বলে শুনেছি। তবে ছাত্র -জনতার নাম ব্যবহার করার কারণ কি? কোন কোন ছাত্রদের নেতৃত্বে স্কুল ভাংচুর করা হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক লোক ছিলো, তাছাড়া ছাত্ররা কারো কথায়ই মানতে চায়না বলে জানিয়েছে মেম্বার ফারুক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে রামদাস মুন্সির হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর তপন কুমার বাকচী পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ যাওয়ার খবর পেয়ে হয়তো দূর্বৃত্তরা পালিয়ে গেছে। এরপর আর তেমন কোনো সমস্যা হয়নি, কতৃপক্ষ তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। বাগান কতৃপক্ষ এই সংক্রান্তে থানায় একটি জিডি করেছে, তবে ঘটনা কে বা কারা করেছে এধরণের কারো নাম জিডিতে উল্লেখ করেনাই।
এবিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র সাথে যোগাযোগের একাধিক বার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Leave a Reply