মুহাম্মদ দিদার হোসাইনঃ
সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বড় উৎসব দুর্গোৎসব ২০২৪ উদযাপনকে সামনে রেখে বাঁশখালী উপজেলা ও আঞ্চলিক পূজা কমিটির সাথে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্তে বাঁশখালী থানা পুলিশের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বিকেল সাড়ে ৪ টায় বাঁশখালী থানা মিলনায়তনে থানা পুলিশ ও পূজা কমিটির আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্তে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম।
থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ওসি) সুধাংশু শেখর হালদারের সভাপতিত্বে ও সেকেন্ড অফিসার কামরুল হাসান কায়কোবাদের সঞ্চালনায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন, রামদাস মুন্সির হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর তপন কুমার বাকচী, বাঁশখালী উপজেলা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ঝন্টু কুমার দাশ, সাবেক সভাপতি ডা.আশীষ কুমার, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক বাবুল কান্তি দেব, সহ-সভাপতি সপন কুমার দাশ, রাজিব কান্তি গুহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু সাজু দাশ, পৌরসভা সভাপতি নির্মল রুদ্র, অধির চক্রবর্তী, পুকুরিয়া সভাপতি সুবল দে, সাধনপুর ইউপির সাধারণ সম্পাদক সুজন দাশ, চাম্বল ইউনিয়ন সভাপতি নিউটন দাশ, বৈলছড়ী ইউনিয়ন সভাপতি শেখর চৌধুরী দে, জনি শীল দে, কালীপুর ইউনিয়ন সভাপতি প্রকৌশলী রনি সরকার, পুঁইছড়ী ইউনিয়ন সভাপতি রাম প্রসাদ দেব, শেখেরখীল ইউনিয়ন সভাপতি প্রণব দেব, শীলকূপ ইউনিয়ন সভাপতি শিপন দাশ, সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের পূজামণ্ডপ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন বাঁশখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী, সদস্য মোহাম্মদ এরশাদ, এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আব্দুল মতলব কালু, সদস্য সাংবাদিক মুহাম্মদ দিদার হোসাইন প্রমূখ।
এবছর বাঁশখালীতে ৮৮ টি সার্বজনীন পূজা জেলা কমিটিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাঁশখালী পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ঝন্টু কুমার দাশ বাঁশখালীর কালীপুর, শীলকূপ, পুঁইছড়ি, পুকুরিয়া, গণ্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনা শীলপাড়া, কাথরিয়া এলাকার কয়েকটি পূজা মণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে উল্লেখ করে ওইসব এলাকায় প্রশাসনের সার্বিক নজরদারি কামনা করেন পূজা কমিটি।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্তে প্রধান অতিথির বক্তব্যে থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি সাইফুল ইসলাম আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা মূলক আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে কমপক্ষে ৫ জন করে তিনটি গ্রুপ সিস্টেম করে অন্তত ১৫ জনের স্বেচ্ছাসেবক সদস্যের টিম থাকতে হবে এবং একটি করে রেজিস্ট্রার খাতা রাখতে হবে। কখন কোন গ্রুপ কোন সময়ে দায়িত্ব পালন করবে সেটি রেজিস্ট্রার খাতায় নামসহ উল্লেখ থাকতে হবে এবং স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাক্ষর অবশ্যই থাকতে হবে। তাদের একটি তালিকা প্রশাসনের আর একটি তালিকা পূজা কমিটির কাছে জমা দিতে হবে।
কোন ধরনের সমস্যা দেখা গেলে হুট করে ফেইসবুকে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং উপজেলা পূজা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করে অবহিত করতে হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে অবশ্যই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে, সিসি ক্যামেরার বাহিরে যেনো কোন পূজা মণ্ডপ না থাকে।
মদ্যপান করে লাফালাফি করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকতে হবে, কেউ মদ্যপান করে পূজা মণ্ডপ এলাকায় এসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।
সড়কে যানজট সৃষ্টি করা যাবেনা, বিগত বছরের ন্যায় এবছরও আযান ও নামাজের সময় মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ রেখে সম্প্রীতি রক্ষা করবেন, আযান ও নামাজের সময় মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ থাকলেও ধর্মীয় পূজা উৎসব কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন। আযান ও নামজের সময় সূচি সম্পর্কে জেনে নিতে প্রয়োজনে পাশ্ববর্তী মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনের সহযোগীতা নেয়ার পরামর্শ দেন।
প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে যারা থাকবে তাদের প্রত্যেকের নাম, মোবাইল নাম্বারসহ তালিকা থানায় জমা দিতে হবে, আর প্রত্যেক মণ্ডপে অবশ্যই একটি করে রেজিস্ট্রার খাতা থাকতে হবে এবং উক্ত রেজিস্ট্রার খাতায় দায়িত্ব পালন করা স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি স্বাক্ষর অবশ্যই থাকতে হবে। অন্যথায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্যে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নের পূজা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির সদস্যদের নাম -মোবাইল নাম্বারসহ একটি তালিকা প্রশাসনে এবং ১টি তালিকা উপজেলা পূজা কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। কোন অবস্থাতেই ফেইসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ধরনের উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়া যাবেনা, উস্কানিমূলক পোস্ট দেখলে তা যাচাই -বাছাই না করে লাইক কিংবা শেয়ার দিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো যাবেনা। যদি কেউ এধরণের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে তাকে সরাসরি আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বিক নিরাপত্তার জন্যে প্রশাসনের টিম থাকবে, যথারীতি মনিটরিং করা হবে, সাংবাদিকরা পরিদর্শনে যাবে তাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকবে, গ্রাম-পুলিশ থাকবে, কোনো ধরনের ভয়ের কারণ নেই।স্বাধীন সার্বভৌমত্বের দেশের সকল ধর্মের মানুষের সম অধিকার রয়েছে, নির্বিঘ্নে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা আগেও ছিলো এখানো আছে ভবিষ্যতেও থাকবে।
উল্লেখ্য,সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে পূজা কমিটির সাথে মতবিনিময় করেছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী বাঁশখালী উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা।জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব উদযাপনে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জামায়াত ইসলামীর নেতারা। ক্রমান্বয়ে ইসলাম আন্দোলন, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে পূজা কমিটি।