দিদার হোসাইন,স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং এর প্রভাবে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে,এতে বসতঘর, কৃষি জমি,ক্ষেতখোলা,পুকুর ও মৎস্য প্রজেক্ট প্লাবিত হয়ে অন্তত ৫ কোটির অধিক সোকসানে কয়েক সহস্রাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
২৪ অক্টোবর(সোমবার)দিবাগত রাত ১০টা নাগাদ দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার ফলে উপজেলা উপকূলীয় অঞ্চলের গণ্ডামারা,চাম্বল, বড়ঘোনা,শীলকূপ, শেখেরখীল, ছনুয়া, বাহারছড়া,প্রেমাশিয়া,খানখানাবাদ, পুঁইছড়ি,কদমরসুল,হালিয়া পাড়ার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় ধানিজমি,ক্ষেতখোলা,রাস্তা -ঘাট, পুকুর ও মৎস্য প্রজেক্ট প্লাবিত হয়ে বড় ধরনের ক্ষতি সম্মুখীন হয়ে পড়ে ওই এলাকায় বসবাসরত হাজার পরিবার।
বাঁশখালীতে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলেও বিভিন্ন সময় জোয়ারের স্রোতে বেশ কিছু অংশে"ব্লক" বিলীন হয়ে পড়ার দৃশ্য ওই বেড়িবাঁধের যথাযথ টেকসই নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সঞ্চারের শেষ নেই।এছাড়াও এখনো পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিঃমিঃ সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সংস্কার বিহীন ও অরক্ষিত থাকার ফলে আমাবস্যা-পূর্ণিমা জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে উপকূলের নিম্নাঞ্চল গুলো।বসবাসরত পরিবার গুলোর অসহায়ত্বের অন্ত নেই।বিশেষ করে বাঁশখালীতে জলকদর খালের অধিকাংশ বেড়িবাঁধে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি।
শেখেরখীল ব্রীজ থেকে ফাঁড়ির মূখ হয়ে সরকার বাজারে উত্তর দিক পর্যন্ত অন্তত তিন-সাড়ে তিন কি.মি.বেড়িবাঁধ খালে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ায় অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে কয়েক হাজার পরিবার।
বাংলা বাজার থেকে গণ্ডামারা বাজার হয়ে সরল সীমানা পর্যন্ত জলকদর খালের অন্তত ১৫ কি.মি.বাঁধ একেবারেই নাজুক হয়ে পড়ে।এছাড়াও গণ্ডামারা এস আলম পাওয়া প্ল্যান্টের ২ নং গেইট হয়ে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হয়ে ধানিজমি,ক্ষেতখোলা,পুকুর ও মৎস্য প্রজেক্ট ধ্বংস হয়ে বড় ধরনের লোকসান পোহাচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণ।
শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা মোর্শেদুল ইসলাম ফারুকী জানান,আমি নতুন নির্বাচিত হয়েছি,ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং এর প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বৃদ্ধি পাওয়াতে ৫/৬ টি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি ডুকে পড়েছে।এলাকা প্লাবিত হয়ে অনেক ঘরবাড়ি,মূরগীর খামার,দোকান পার্ট, ধানিজমি,ক্ষেতখোলা,পুকুর ও মৎস্য প্রজেক্ট সহ জেলে পরিবার গুলোর অনেক জাল পানিতে থলিয়ে গেছে।যার ফলে লাখ লাখ টাকা লোকসান পোহাতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবার গুলোকে।সোমবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,কৃষি কর্মকর্তা, এসিল্যন্ড সহ এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এলাকাটি পরিদর্শন করতেছে বলেও জানান চেয়ারম্যান মোর্শেদ।
বাহারচড়া ইউপির শাহেদ বলেন,হালিয়া পাড়া এলাকায় খালের বাঁধের উপর দিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছ,এবং পুকুরিয়া ইউপিস্থ ৬নং ওয়ার্ড বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন,পুকুরিয়ার তেচ্ছিপাড়া এলাকায় খালে বাঁধের ব্লক গুলো জোরের পানিতে বিলীন হয়ে যাওয়াতে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় আমার মৎস্য প্রজেক্ট প্লাবিত হয়ে অন্তত ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।এছাড়াও এলাকার অনেক পরিবারের কৃষি,ক্ষেতখামার ও পুকুর ঢুবে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান নাজিম।
ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং এর প্রভাব ও ধমকা হওয়ার ফলে গাছ-গাছালি ভেঙে একধরনের লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুরো বাঁশখালী।
পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে ছনুয়া উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি নামক গ্রন্থগারটিও।এব্যাপারে উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাংবাদিক আনোয়ারুল আজিম সাঈফী জানান,চলমান উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ছনুয়া এলাকার অনেক বেড়িবাঁধে।দীর্ঘদিন যাবত সংস্কারের অভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে আছে জলকদর খালের বেড়িবাঁধ ও চলাচল সড়ক গুলো।আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের শুরু হতেই পানি আতংকে দিনাতিপাত করছে পুরো এলাকার মানুষ।ঘূর্ণিঝড় চিত্রাং এর প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়াতে আবারও পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে।এমনকি উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরিটিও পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে।এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে ছনুয়া বাসীর পক্ষ থেকে সরকার কাছে দ্রুত বাঁধ সংস্কারের দাবী জানান সাঈফী আনোয়ার।
এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা প্রকাশন চাকমা (বাঁশখালী)জানান,ঘূর্ণীঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে বাঁশখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকটি এলাকায় আমাদের লোকজন পরিদর্শনে গেছে,আমিও এখন শেখেরখীল এবং ছনুয়া ইউনিয়নের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে আছি।সিত্রাং এর প্রভাবে সবমিলিয়ে এই পর্যন্ত কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখনো পর্যন্ত তা পুরো পুরো ভাবে বলা যাচ্ছে না,পরিদর্শন শেষে আমাদের লোকজন সবাই মিলিত হলে হয়তো ক্ষতির পরিমাণটা হিসেব করে সন্ধ্যার দিকে বলতে পারবেন বলেন তিনি।
বাঁশখালীর বুক ছিড়ে বয়ে যাওয়া অরক্ষিত বেড়িবাঁধ গুলো সংস্কারের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাকাশন চাকমা আরো বলেন,বাঁশখালীর জলকদর খালের দুপাশের বেড়িবাঁধ সংস্কার ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাকী অংশ সংস্কার কাজের জন্যে ১২'শ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।এটা অনুমোদন হয়ে গেলে হয়তো বেড়িবাঁধের সকল সংস্কার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।ইতিপূর্বে ২৫০ কোটি বরাদ্দে বেড়িবাঁধে বসানো "ব্লক"গুলো পানিতে থলিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এবং ওই বেড়িবাঁধের টেকসই জনমনে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,কোথাও "ব্লক"পানিতে থলিয়ে যায়নি।তবে কদমরসুল এলাকার উত্তর পাশে বিশাল চর এলাকার ফলে বঙ্গোপসাগরের জোরের স্রোত এক নাগারে কদম রসুল এলাকার দিকে পড়ছে তাই সেদিকে কিছু অংশ ভেঙে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা(বাঁশখালী) প্রকাশন চাকমা।