মুহাম্মদ দিদার হোসাইনঃ
বাঁশখালীতে কৃষি উন্নয়ন ও উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে গ্রাম-গঞ্জের সার ডিলার ও কীটনাশক ডিলার সংস্কার করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
সংকটময় সময়ে দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সমৃদ্ধি করতে কৃষি উন্নয়ন ও উৎপাদনে গ্রাম-গঞ্জে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সার ডিলার সংস্কার ও মাটির উর্বরতা ধ্বংসকারী নামে-বেনামে কোম্পানির কীটনাশক সয়লাব বন্ধ করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালার কোন তোয়াক্কাই করেনা ডিলারশিপরা।
দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করনের অন্যতম অবলম্বন কৃষিখ্যাত। কৃষি উৎপাদন ও সম্প্রসারণে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগই কৃষি উৎপাদনে অতুলনীয় অবদান রাখে। কৃষি উন্নয়নকে আরো বহুগুণে সমৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে উন্নয়ন ও উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর পরিবর্তে ডিলার সিন্ডিকেট চক্রের হয়রানি ও কৃষি অফিসের অসহযোগিতার কারণে দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের কৃষকরা। আগ্রহ হারানোর অন্যতম কারণ হলো সার ও কীটনাশকসহ কৃষি উপদান ও কৃষি উপকরণের মূল্যের উর্ধ্বগতি, ডিলার সিন্ডিকেট বাণিজ্য ও কৃষি অফিসের অবহেলা ও অসহযোগিতা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় দেড়যুগ ধরে সার ডিলারদের জিম্মি অবস্থায় রয়েছে গ্রাম-গঞ্জের লাখ লাখ কৃষক পরিবার। চরম অবহেলার শিকার হচ্ছে কৃষকরা। কৃষকদের সহযোগিতার পরিবর্তে সার ডিলারদের সহযোগিতা করে আসছিল কৃষি অফিস। ক্ষমতার দাপট ও অর্থের বিনিময়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের ডিলারশীপ পেয়ে দিতে রিপোর্ট দিয়ে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং সংশ্লিষ্টরা সহযোগিতা করে আসছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা ২০০৯ এর কোন ধরনের তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে পছন্দের লোকের পক্ষে রিপোর্ট দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের ডিলারশিপ পেয়ে দিতে সার ও বীজ মনিটরিং সংশ্লিষ্টরা এই সহযোগিতা করতো বলেও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
সাধারণত গ্রাম-গঞ্জের কৃষকরা কৃষিকাজে ইউরিয়া গুটি সার, ইউরিয়া চিকন দানা, ডিএপি, টিএসপি, এমওপি সার বেশি ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে ইউরিয়া (নাইট্রোজেন সংবলিত রাসায়নিক) সারের উপকারিতা বেশি হওয়াতে এধরণের সার সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে গ্রাহকদের চাহিদা ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে পুঁজি করে ওইসব সার গ্রাম-গঞ্জের ডিলাররা চড়াদামে বিক্রি করার লক্ষ্যে গুদামজাত করে বিভিন্ন সংকট ও অযুহাত দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে আসছিল। এছাড়াও ধ্বংসাত্মক পোকার আক্রমণ থেকে ধান ও ক্ষেতখোলাকে রক্ষা করতে যেসব কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে তাতেও কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিলাররা।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা, সরল, শীলকূপ, চাম্বল, শেখেরখীল, পুঁইছড়ি, ছনুয়া, উপজেলা সদর, পৌরসভা, বৈলছড়ী, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া, খানখানাবাদ, বাহারচড়া, কাথরিয়াসহ প্রতিটি এলাকায় টানা একসপ্তাহব্যাপী পরিদর্শনে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো দোকানেই দেখা যায়নি সার ও কীটনাশকে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা। নামে -বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক (বিষ) সয়লাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে কৃষকরা। অসাধু ব্যবসায়ীদের ডিলারশিপ পেয়ে দিতে ও মাটির উর্বরতা ধ্বংসকারী নামে -বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক সয়লাবে সরকারি কৃষি অফিস সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগও অহরহ।
এছাড়াও কৃষকদের জন্যে আসা সরকারি কৃষি কার্ড ও কৃষি প্রণোদনা সুবিধা পেয়ে থাকে ডিলারশিপ ধারীদের পছন্দের ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি সংশ্লিষ্টদের একান্ত লোকজন ,যাদের বেশিরভাগই অকৃষক। কৃষি অফিসের অসহযোগিতা, প্রকৃত কৃষকদের সরকারি সুবিধা বঞ্চিত করণ ও ডিলারশিপদের হয়রানিতে একদিকে কৃষি উৎপাদনে দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের লাখ লাখ কৃষক। অপরদিকে নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহারে চরম ভাবে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি গুলো।
Leave a Reply