নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ
চট্টগ্রামে আনোয়ারা উপজেলায় ১১ ইউনিয়নের ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ ফার্মেসী।অবৈধ ফার্মেসী গুলোতে পল্লী চিকিৎসক আর ফার্মেসী মালিকদের একপরথা রমরমা ব্যবসা।ওই সব ফার্মেসীর অনেক মালিক আর পল্লী চিকিৎসকরা নিজের নামটি লিখতে কলম ভাঙ্গে অথচ ডাক্তার সেজে ঔষুধ ও ব্যবস্থা পত্র দিয়ে থাকেন। রোগ মুক্তি নয় ওষুধ বিক্রি যেন তাদের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, উপজেলা সদরের, চাতরী চৌমুহনী বাজার,বন্দর মহাল খাঁন বাজার,বটতলী,মালঘর বাজার,জয়কালী বাজার, সত্তরহাট, জুঁইদন্ডী, বরুমছড়া রাস্তার মাথা,সরকার হাট বাজারের , কালিবাড়ী সহ প্রত্যকটা ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ফার্মেসী নামের পল্লী চিকিৎসকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া রমরমা ব্যবসা। অভিযোগ অবৈধ ফার্মেসী গুলোতে ভেজাল, নিন্মমানের ভারতীয় ওষুধ, মেয়াদ উর্ত্তীন ওষুধ, ওভার রাইটিং করে বেশী মূল্যে ওষুধ বিক্রি। কোম্পানী ওষুধের দাম বৃদ্ধি না করলেও ফার্মেসীর মালিকগন ইচ্ছা মাফিক দাম হাকাচ্ছেন, প্রশ্ন করলে ওষুধ বিক্রি নেই বলে তখন ক্রেতা সাধারন উপায়হীনভাবে কোম্পানীর নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
ফার্মেসী গুলো চিকিৎসকের অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ট্যাবলেট ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ, ভারতীয়, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের নানা ধরনের ঔষধ অবাধে বিক্রি করে আসছে।এমনি পাড়া-মহল্লায় মুদির দোকান গুলো হাত বাড়ালে পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকার ঔষধ।
আব্দুল ছালাম নামে এক ভুক্তভোগী জানান, বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পায়ের মধ্যে বাঁশের টুকরো ডুকে যায়। পায়ের ব্যাথা জন্য চাতরী চৌমুহনী বাজারের মাসুদা ফার্মেসী চিকিৎসক মাহফুজুল হক চৌধুরীকে দেখালে ওনি কোন রকম এক্স-রে ছাড়া ২ বার আমার পায়ের ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে দে।এতে আমার পা থেকে প্রচুর রক্তক্ষণ হয়। একটা প্রেসক্রিপশন দিয়া ৩ দিনের ঔষধ ক্ষেতে বলেন।আমার হাতে তেমন টাকা না থাকার কারণে ঔষধ না নিয়ে বাসা চলে আছি। সন্ধ্যায় প্রেসক্রিপশন ঔষধের জন্য মাসুদা ফার্মেসীতে গেলে ফার্মেসী বন্ধ পাওয়া যায়। চাতরী চৌমুহনী বাজারের সকল ফার্মেসীতে গেয়ে প্রেসক্রিপশনের ঔষধ পাওয়া যায়নি।নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ফার্মেসী জানান, ডাঃ মাহফুজুল হক সবগুলো ৩ নাম্বার কোম্পানি ঔষধ বিক্রি করে - কম দামে অধিক মুনাফা লাভের আশা।
এমন অভিযোগ বিষয়ের যোগাযোগ করা হলে চিকিৎসক মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, আব্দুল ছালাম নামে এক রোগী চিকিৎসা পায়ে সমস্যা নিয়ে আসলে আমি চিকিৎসা করি। এক্স-রে ছাড়া ব্লেড দিয়ে পা কেটে অপারেশন কোন করার নিয়ন কিনা জানতে চাইলে ডাঃ মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, আমি ক্ষত দেখে ব্লেড দিয়ে কেটে একটু দেখছি। তবে আমি পরে রোগীকে এক্স -রে করার জন্য বলছি।
আরফাত হোসেন নামে এক রোগী জানান, মাসুদা ফার্মেসীতে একটা প্রেসক্রিপশন নিয়ে গেয়েছিলাম। ওনি আমাকে প্রেসক্রিপশনের ঔষধ না দিয়ে ৩ নাম্বার কোম্পানি দেন।জানা যায়, ঔষধ কোম্পানি গুলো থেকে ৩ নাম্বার ঔষধ বিক্রি করে বড় অংকের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে মাসুদা ফার্মেসী।
ভুক্তভোগিরা জানান, অনেক সময় এমবিবিএস ডাক্তারগণ রোগীর অবস্থা বুঝে নামীদামী কোম্পানীর ঔধুষ প্রেসক্রিপশনে লিখলেও ওই সব অর্ধশিক্ষিত, অপ্রশিক্ষিত ওষুধ বিক্রেতারা বেশী লাভের আশায় ডাক্তারের লিখা ওষুধ পরিবর্তনও করে দিচ্ছেন অহরহ। তারা নিজেরা ডাক্তার সেজে ঔষুধ ও প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। তাই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে আশাংকাজনকভাবে। ডাক্তারী পরামার্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করে অকালে মৃত্যু হয়েছে এমন নজীরবিহীন ঘটনাও অনেক ঘটছে।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪০ অনুসারে কারও ঔষধের দোকান বা ফার্মেসি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে প্রথমেই কমপক্ষে ছয় মাসের ফার্মাসিস্ট কোর্স করে সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
পরে সংশ্লিষ্ট ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ফার্মাসিস্ট সনদ জমা দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নম্বর ধারাশ ফার্মেসী কায় 'ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ' শিরোনামে উল্লেখ্য আছে, কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেউন্সিলের কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ঔষধ বিক্রি হচ্ছে এসব ফার্মেসীতে।
ঔষধ ক্রয় করতে আসা কয়েকজন সচেতন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন ফার্মেসীতে আর বিশেষজ্ঞ লোকের দরকার হয় না। ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা বলে দেন কোন ঔষধ কী কাজে লাগে- সেই অনুযায়ী ঔষধ বিক্রি হয়। এ ছাড়া অনেক ঔষধের দোকানে নিম্নমানের ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা ঔষধ বিক্রি করে দেন। ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালোমানের ঔষধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এ প্রতিবেদককে জানান, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা একেবারেই উচিৎ নয়। ওষুধ বিক্রেতা ও ক্রেতাকে বুঝতে হবে ওষুধ কোন খাদ্য দ্রব্য নয় এটি মূলত এক ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য। নিয়মমাফিক ব্যবহার না করলে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমর্কী হয়ে দাঁড়ায়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার স্বীকার হচ্ছে অনেক রোগী।
ডাক্তারী পরামার্শ ছাড়া এক রোগের ওষুধ খেতে গিয়ে অন্য একটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
অবৈধ ফার্মেসী অভিযোগের বিষয়ের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডা. মামুনুর রশীদ'র জানান, ইতিমধ্যে অবৈধ ফার্মেসী এবং পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আমার কাছে কয়েকটা অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, অবৈধ ফার্মেসী এবং চিকিৎসক বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।