দিদার হোসাইন,স্টাফ রিপোর্টারঃ
উন্নত ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবায় অনেক ধাপ এগিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে শুনা যেতো নানান আলোচনা-সমালোচনা,সাম্প্রতিক সেই সৃষ্ট সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে উন্নত ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
২২ অক্টোবর (শনিবার) পরিদর্শন কালে হাসপাতালে চিকিৎসারত বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবায় রোগীদের সন্তুষ্টির কথা।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকা সেবার স্তরগুলো পুরোদমে চালু হওয়াতে সমন্বিত সেবার দুয়ার পুনরায় নতুন ভাবে উন্মোচিত হয়েছে।এতে সেবা নিতে প্রতিনিয়ত এই হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে রোগীদের ভীড় চোখে পড়ার মতো,আর কর্মরত ডাক্তাররাও নিরলসভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।এছাড়াও হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়াতে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা সেবা থেকে মূখ ফিরিয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভীড় জমাচ্ছে রোগীরা।
সেবা সমূহের মধ্যে নরমাল ও সিজার ডেলিভারিতে উপকৃত হচ্ছে গর্ভবতী রোগীরা।তাছাড়া ৫০শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ২৫ জন চিকিৎসক ও ২৩ জন দক্ষ নার্স(সেবিকা)মিডওয়াইফসহ জরুরি ও বহির্বিভাগে রোগীদের নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
গর্ভবতী (প্রসূতি)রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে খোলা হয়েছে আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি সহ অপারেশন টিয়েটার।
এইব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার এস এম আরমান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসার মান অনেক ধাপে এগিয়ে গেছে,মেডিকেলের আশপাশ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত জমে থাকা ময়লার স্তুপগুলো অপসারণ করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত পানিসরবরাহ সহ সম্পূর্ণ মনোরম পরিবেশে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে এই মেডিকেলে।হাসপাতালের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগীদের অসুস্থতা অনেক সময় বৃদ্ধি পায়।তাই রোগীদের প্রশান্তি ও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণে চিকিৎসা সেবার সকল স্তরকে রোগীদের জন্যে সার্বক্ষণিক উম্মুক্ত রাখা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সেবার মান বৃদ্ধি হওয়ার ফলে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা সেবা থেকে মূখ ফিরিয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রোগীরা প্রতিনিয়ত ভীড় জমাচ্ছে,এতে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবক/নার্সরাও নিরলস ভাবে রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।আর রোগীরা যথাসময়ে সুচিকিৎসা সেবা পেয়ে সন্তুষ প্রকাশ করছে রোগীরাও।
হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শফিউর রহমান মজুমদার বলেন,একসময় এই হাসপাতালে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হলেও,সকল প্রতিকূলতার অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বাড়াতে সেবা স্তরগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,মুজিব বর্ষের স্লোগান ছিলো”মুজিব বর্ষে স্বাস্থ্য খাত” এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ”এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে শুরু হয় এই হাসপাতালের সেবার মান উন্নীত করণ প্রক্রিয়া।
এক সময় ফার্নিচার এর অভাবে চিকিৎসকদের থাকার রুমের অবস্থা ছিল একদম সাদামাটা। এ বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে এ সমস্যার সমাধান করেছি।হাসপাতালের বিশেষ কোন প্রয়োজনে স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি মহোদয়,উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় পরামর্শ ও লজিস্টিক সাপোর্ট সহ সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।
এছাড়াও বিভাগীয় পরিচালক(স্বাস্থ্য)সিভিল সার্জন (চট্টগ্রাম)মহোদয় এই বিষয়ে সহযোগিতাসহ বেশ তদারকি করেন।যাতে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা অধিকার নিশ্চিত করা যায়।
চিকিৎসা সেবা স্তরগুলো রোগীদের জন্যে উম্মুক্ত রাখা হলেও হাসপাতালে যে এম্বুলেন্স আছে সেটি অনেক পুরাতন হয়ে পড়েছে এবং হাসপাতালের মুল ভবনটিও পুরাতন ও জরাজীর্ণ হওয়ার ফলে সেবায় কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।বর্তমানে এই হাসপাতালে রোগীদের জন্যে যেভাবে সেবার মানকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে সেই মানকে যেন আরো উন্নত ও আধুনিকায়ান করে সুন্দর ও সু-স্বাস্থ্যকর পরিবেশে যাতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারি সেই জন্যে ওই পুরাতন (জরাজীর্ণ) ভবনটি সংস্কার প্রয়োজন।এছাড়াও মুমূর্ষু রোগীদের যাতায়াত সুবিধার্থে নতুন এম্বুলেন্সের প্রয়োজনীতাও কম নয়।
অধিকতর, উন্নত ও মানসম্মত সেবা দিতে পারি।এ লক্ষ্যে বর্তমানে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আন্তঃবিভাগ, বহির্বিভাগ বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা সহ NCD কর্ণারে বিনামূল্যে দীর্ঘমেয়াদী রোগের চিকিৎসা এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়, IMCI কর্ণারে শিশু রোগীদের চিকিৎসা করা হয়, ANC/ PNC কর্ণারে প্রসূতি মায়ের চিকিৎসা প্রদান করা হয়, Community Vision Centre মাধ্যমে চোখের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করা হয়, ORT Corner মাধ্যমে ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা করা হয়, VIA Centre মাধ্যমে মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত করণ,ল্যাব পরীক্ষা,জিন এক্সপার্ট পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাফী পরীক্ষা,কোভিড-১৯ পরীক্ষা এবং এক্সরে পরীক্ষা করা সহ সকল রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে ইপিআই কার্যক্রমের পাশাপাশি কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ কল্পে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য ২০ শয্যা বিশিষ্ট ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, পালস অক্সিমিটার, কার্ডিয়াক মনিটর, নেবুলাইজার,সাকার মেশিন সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর মাধ্যমে করোনা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।অান্তঃবিভাগ ওয়ার্ডে প্রবেশে বেশ কড়াকড়ি এখন। রোগীপ্রতি একজন করে দর্শনার্থী থাকতে পারেন।সাম্প্রতিক সময়ের দালাল তৎপরতা বর্তমানে এই হাসপাতালে তেমন দৃশ্যমান নয়,বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিতে দায়িত্বে থাকা লোকজনের উপস্থিতিও খুব লিমিটে।এই হাসপাতালে তাঁরা ঢুকতে পারেন সপ্তাহে তিন দিন, তাও দুপুর একটার পরে।তাছাড়া এই হাসপাতাল বৈদ্যুতিক সংযোগ ও সোলার বাতির আলোতে আলোকিত।রোগী ও হাসপাতালের সর্বিক নিরাপত্তায় প্রতিটি ফটকে রয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা।
উপজেলর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রতিদিন প্রায় ৪০০ জন এবং জরুরী বিভাগে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন।এছাড়াও সিজারিয়ান অপারেশন স্তর চালু হওয়ার পর থেকে অপারেশন যোগ্য প্রসূতি রোগীদের সিজার অপারেশন করা হচ্ছে।প্রতিমাসে নরমাল ডেলিভারী করা হয় প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন গর্ভবতী মায়ের।জরুরী প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় ২৪ ঘন্টা হাসপাতালে ডেলিভারীর ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দাতা গোষ্ঠীদের সার্বিক সহযোগিতায় রোগীদের জন্যে পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত খাবার ব্যবস্থা,খাদ্য পানিয় সুবিধার্থে ফিল্টার স্থাপন, প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী প্রদান,পরিচ্ছন্ন টয়লেট ও হাসপাতাল এলাকার পরিচ্ছন্নতা সহ হাসপাতালের সার্বিক দিক বিবেচনা করলে খুব সহজেই প্রতিয়মান বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শফিউর রহমান মজুমদার যোগদানের পর থেকে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম সহ চিকিৎসার মান অনেক ধাপে উন্নত হয়েছে।
ডাঃ শফিউর রহমান মজুমদার বলেন,হাসপাতালে বর্তমান চিকিৎসার মান যে পরিমাণে উন্নত হয়েছে তা কিন্তু অতীতের মানের সাথে মোটেও মিলানো অসম্ভব।চলমান এই মানকে ধরে রাখতে পারলে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালকে আরো অধিকতর উন্নত ও আধুনিকায়ন করে খুব শিগগিরই এই হাসপাতালকে একটি মডেল ও আধুনিক হাসপাতালে পরিণত করতে সক্ষম হবে বলে জানান তিনি।
বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলী জানান,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নত চিকিৎসা সেবার যে স্তরগুলো বর্তমানে চালু রয়েছে সেগুলো অতীতের তুলনায় খুবই উন্নত ও প্রশংসনীয় এবং হাসপাতাল এলাকার পরিচ্ছন্নতা ও দৃশ্যমান।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদুজ্জমান চৌধুরী জানান,সাম্প্রতিক সময়ে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবার বিষয়ে নানান জটিলতা দেখা যেতো,কিন্তু বর্তমানে এই হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা স্তরগুলো খোলার পর থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে রোগীদের কোন অভিযোগ শুনা যায়না।প্রসূতি রোগীদের জন্যে সিজার অপারেশন (ওটি)স্তর চালু করায় একদিক দিয়ে খুব সহজেই তাঁরা চিকিৎসা পাচ্ছেন অন্যদিকে খরচের দিক বিবেচনা করলেও দেখা যায় রোগীদের চিকিৎসা খরচটাও খুবই স্বাশ্রয়ী হচ্ছে।এই হাসপাতালে বিভিন্ন রোগীরা নানামুখি উন্নত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।
বিশেষ করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যখন সারাবিশ্ব জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল তখন কিন্তু করোনা রোগীদের জন্যে এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা উম্মুক্ত ছিলো,এসময় বাঁশখালীতে করোনা সংক্রমিত কোন করোনা রোগীকে চিকিৎসা নিয়ে কোন হিমশিম খেতে হয়নি। নিরসল ভাবে চিকিৎসকরা এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন।এছাড়াও কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply