দিদার হোসাইন,স্টাফ রিপোর্টারঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের শেখেরখীল ইউনিয়নের পশ্চিম দিকে ঘেসে গিয়ে শেখেরখীল ফাঁড়ির মূখ থেকে সরকার বাজার হয়ে খাটখালী মোহনায় বঙ্গোপসাগরে মিলিত হওয়া জলকদর খালের অরক্ষিত বেঁড়িবাঁধের ফলে অনিশ্চিত জনজীবন।
শনিবার বিকেলে শেখেরখীল ফাঁড়ির মূখ থেকে সরকার বাজার হয়ে বাংলা বাজার পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়,জলকদর খালের বাঁধটি অস্থিত্বহীন হয়ে পড়ার বেহাল চিত্র।
বাঁধ সংলগ্ন কয়েক সহস্রাধিক বসতঘর যে কোন মূহুর্তেই চলে যেতে পারে নদী গর্ভে।তাছাড়া ওই এলাকার ব্রীজ ঘাটা থেকে ফাঁড়ির মূখ হয়ে সরকার বাজারের অন্তত তিন কি.মি.উত্তর দিক পর্যন্ত ওই খালের বেড়িবাঁধ নদীর স্রোতে বিলীন হয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।
বাঁশখালীর বুক ছিঁড়ে বয়ে যাওয়া জলকদর খালটি স্থানীয়দের জন্যে কখনও আর্শীবাদ আবার কখনও অভিশাপে পরিনত হয়।এক সময় যোগাযোগ ও মালামাল আমদানি-রপ্তানির একমাত্র মাধ্যম ছিল খালটি।এখন একদিকে চলছে অবৈধ দখলকারদের রাজত্ব,অন্যদিকে পানির স্রোতে খালে বিলীন হয়ে অস্তিত্ব সংকটে বাঁধটি।
অরক্ষিত ওই বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বসবাসরত প্রায় কয়েক সহস্রাধিক পরিবারের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে জলকদর খালের ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ে তারা।
বাঁশখালীর গণ্ডামারা,ছনুুয়়া,শেখেরখিল,পুুঁইছড়়ি, সরল,চাম্বল,পুকুরিয়া,বাংলা বাজার হয়ে এ জলকদর খালটি বঙ্গোপসাগরে মোহনায় গিয়ে পড়েছে। জলকদর খালের দু,পাশে,গন্ডামারা, চাম্বল বাংলাবাজার, পুইছড়ি,শেখেরখীল ও শিলকূূপের জালিয়়াখালী বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীরা অবৈধ দখল করে নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে দখলদার রাজত্ব কায়েম করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
পায়ে হেঁটে চলাচল করার মতো কোন সুযোগ নেই ফাঁড়ির মূখ হয়ে সরকার বাজারের উত্তর দিকে অন্তত তিন কি.মি.পর্যন্ত বাঁধটি।
ভাঙ্গন রীতি রোধ করা না গেলে শেখেরখীল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সরকার হাট,মাহব্বত আলী পাড়া, কাছারী পাড়া, সিকদার পাড়া, বাতার পাড়ার প্রায় কয়েক সহস্রাধিক পরিবারের মানুষকে ঝুঁকিতে থাকতে হবে।
অমাবস্যা পূর্ণীমার জোয়ারের পানির স্রোতে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের লবনাক্ত পানি ডুকে পড়ার আশংকায় করছে স্থানীয় জনসাধারণ।লবনাক্ত পানি ডুকে পড়লে ফসিল জমি,পুকুর ও মৎস্য প্রজেক্ট ধ্বংস হয়ে পড়বে।এতে বড় ধরণের লোকসানের স্বীকার হবে কৃষি পরিবার গুলোও।
তাই স্থানীয় জনগন জরুরী ভিক্তিতে ওই এলাকায় বাঁধ সংস্কারের জন্যে উর্ধতন কতৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এ ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শণ কালে স্থানীয় ব্যবসায়ী নজির আহমদ, আহমদ মিয়া, আবু সৈয়দ, আবদুর রহমান, সৈয়দ নুর, আবদুর রশিদ, ইসহাক,মোহাম্মদ আলী,আমিন সওদাগর, জাফর উল্লাহ, আবু ছালেক সহ অনেকে জানান, জোয়ার আসলে স্থানীয় জনগন শংকায় থাকে কখন বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ডুকে এ আশংকায়,উপকুলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষ গুলোর ঘুম হারাম হয়ে যায়।ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান সরকার হাট এলাকা থেকে শেখেরখীল ফাঁড়ির মূখ পর্যন্ত খালের বাঁধটি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকবেনা।দোকান পার্ট,বরফ মিল ও বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।এতে গৃহহারা হয়ে পড়বে শেখেরখীলের কয়েক সহস্রাধিক পরিবার।বড় ধরনের লোকসানে পড়বে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো।
শেখেরখীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, জলকদর খালের শেখেরখীল এলাকায় বাঁধ সংস্কারের জন্য নানা ভাবে আবেদন করা হয়েছে।এই এলাকার বাঁধ সংস্কার না হলে বর্ষায় অনেক বেশি কষ্ট পাবে জনগণ এমনকি চলাচল ও করতে পারবেনা।তাছাড়া শেখেরখীল সরকার বাজার থেকে ফাঁড়ির মূখ পর্যন্ত জলকদর খালটি বঙ্গোপসাগরের শঙ্খের মোহনায় সংযুক্ত,ওই খালের বেড়িবাঁধের প্রায় অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।বর্ষার মৌসুমে আমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রবল জোয়ারের স্রোত শুরু হলেই থলিয়ে যাবে পুরো এলাকা।শত শত একর ফসলি জমি জোয়ারের পানিতে ডুবে গেলে কয়েকশ পরিবার গৃহ হারা হয়ে পড়ারপাশাপাশি লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতিতে পড়বে স্থানীয় চাষি পরিবারের সদস্যরা।তাই সরকার বাজার থেকে ফাঁড়ির মূখ পর্যন্ত জলকদর খালের বেড়িবাঁধ সংস্থার করার জন্যে সরকার কাছে দাবি জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলার গুলো ওই এলাকা বরফ গুলো থেকে বরফ সংগ্রহ করতে আসে ওই এলাকায়।বাঁধটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে বরফ মিল গুলো যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
ওই এলাকায় বিসমিল্লাহ আইস ফ্যাক্টরী,শাহ আমানত আইস ফ্যাক্টরী,বাইতুশ শরফ আইস ফ্যাক্টরী,কুতুবদিয়া আইস ফ্যাক্টরী,
শেখেরখীল আইস ফ্যাক্টরী,বাংলাদেশ আইস ফ্যাক্টরী,আল মদীনা আইস ফ্যাক্টরী,শেখেরখীল ফাঁড়ির মূখ আইস ফ্যাক্টরী,আল্লাহর দয়া আইস ফ্যাক্টরী,মেসার্স শুক্ককুর অয়েল স্টোর সহ অন্তত ২০/২৫ টি বরফ মিল রয়েছে,আইস ফ্যাক্টরীতে আব্দুশ শুক্কুর,আব্দুস সবুর, রিদওয়ান কোম্পানি, ইসমাইল কোম্পানি, আল্লাহ মালিক ফিশিং বোট মালিক মওলানা আব্দুল খালেক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন,শেখেরখীলের জলকদর খাল সংলগ্ন সরকার বাজার থেকে ফাঁড়ির মূখ পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন দোকান পার্ট সহ অনেক বরফ মিল আছে,বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ফিশিং বোট গুলো প্রতিনিয়ত বরফ সংগ্রহের জন্যে ছুটে আসে ওই বরফ মিল গুলোতে।কিন্তু খালের বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলে বরফ মিল সহ দোকান পার্ট গুলো নদীতে বিলীন হয়ে সর্বস্ব হারাবে মালিক পক্ষ।তাই বাঁধটি দ্রুত সংস্কার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ অসহায় মানুষের ঘর বাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষা করার জন্যে সরকারের কাছে তারা জোর দাবি জানান।
বর্তমান সরকারের দেশব্যাপী চলমান উন্নয়নের ছোঁয়া এখনো লাগেনি বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের পশ্চিম দিক দিয়ে ঘেসে যাওয়া জলকদর খাল সংলগ্ন সরকার বাজার থেকে শেখেরখীল ফাঁড়ির মূখ পর্যন্ত জলকদর খালের বেড়িবাঁধে।
আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের স্রোত শুরু হলেই নির্ঘুমে রাত পোহাতে হয় উপকূলের শেখেরখীলের ওই এলাকার ব্যবসায়ি ও স্থানীয় পরিবার গুলোকে।নদীর ভাঙ্গণে প্রতিবছরই লোকসানের অন্ত থাকে না তাদের।তাছাড়া বর্ষার মৌসুমে গ্রামীন সড়ক গুলো পানিতে ডুবে থাকায় প্রধান সড়কের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উপকূলীয় অঞ্চলের।
এসময় কুতুবদিয়া উপজেলা বোট মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন,আমাদের বোট গুলো যখন মাছ ধরার সাগরে ছুটে যায় তখন আমরা দেখতে পাই যে, ইন্ডিয়ান জেলেরা বাংলাদেশের দুই/আড়াইশ মাইল ভিতরে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়।অথচ আমাদের বোট গুলো বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে মাছ ধরতে গেলেও ইন্ডিয়ান নৌবাহিনী সদস্যরা আমাদের বোট গুলো জেলে সহ তারা ধরে নিয়ে যায়।কিন্তু ইন্ডিয়ান জেলেরা আমাদের সীমানার ভিতরে মাছ ধরে নিয়ে গেলেও আমাদের দেশের নৌবাহিনী কিংবা কোস্ট গার্ড সদস্যরা তাদের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে ইন্ডিয়ান জেলেরা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশখালীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন,বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের ছনুয়া,শেখেরখীল,গণ্ডামারা,সরল, খানখানাবাদ সহ বাঁশখালীর অভ্যান্তরীন জলকদর খালের দু,পাশে ৬০ কিমি এবং সাঙ্গু নদীর ৪.৭০ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রপোজল পাঠানো হয়েছে।আর বাঁশখালীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের প্রায় ৯৪℅ কাজ আমরা শেষ করেছি,এই বছরের মধ্যে আমরা ওই বরাদ্দের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারবো।তবে খানখানাবাদের কদমরসুল প্রেমাশিয়া কিছু অংশ বেড়িবাঁধ ফোল্ডারের বাইরে ছিল তার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা রাখি এসব কাজ করতে পারলে বাঁশখালীর জনগণকে দুর্যোগে কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাঁশখালী উপজেলায় পোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি, ৬৪/১সি এবং ৬৪/২এ এর আওতায় সর্বমোট ১৪২.০০ কিমি বাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ৩৬.০০ কিমি উপকূলীয় বাঁধ এবং অবশিষ্ট ১০৬.০০ কিমি আভ্যন্তরীন বাঁধ। উপকূলীয় বাঁধের মধ্যে ৯.৬ কিমি চলমান প্রকল্পের আওতায় সুরক্ষিত করা হচ্ছে। বর্তমান অগ্রগতি ৯৪.৫%। প্রকল্পটি জুন/২০২২ এ সমাপ্ত হবে। অবশিষ্ট অংশের মধ্যে কারিগরি কমিটি ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশের আলোকে অতিঝুঁকিপূর্ণ বাঁধসমূহ চিহ্নিত করে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৯.২৭ কিমি উপকূলীয় বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণ, ৭.১৩ কিমি নদী তীর প্রতিরক্ষা, ২১.৯৪ কিমি আভ্যন্তরীন বাঁধ পুনর্বাসন, ১৬.০০ কিমি জলকদর খাল সহ ৮০.৩৩৬ কিমি খাল পুনঃখনন, প্রেমাসিয়া বাজারের উজানে সাঙ্গু নদীর লুপকাট, ৫ টি স্লুইস গেইট পুনঃনির্মাণ,২টি ইনলেট-আউটলেট নির্মাণ, সাংগু নদীর তৈলারদ্বীপ ব্রীজের ডাউন্সট্রিমে ৯.৬১৫ কিমি ড্রেজিং কাজও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।এই প্রকল্পটি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হলে বাঁশখালী উপজেলায় কৃষি ক্ষেত্রে, লবন চাষ,বসতঘর রক্ষায় এবং বিশেষ করে সাইক্লোনের সময় উপকূলবাসীর দুশ্চিন্তার অবসান হবে।
বাঁশখালীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মানের ব্যাপারে বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন,আমি প্রথম বারে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর আমার প্রথম দাবী ছিল বাঁশখালীর উপকুলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার দাবী পূরণ করেছে।বর্তমানে স্থায়ী বাধেঁর কাজ শেষ পর্যায়ে। উপকুলে আবারো নতুন করে শুরু হয়েছে বসতি ও নানা ধরনের সবজি, ধান ও মৎস্য চাষ।এতে উপকৃত হচ্ছে আমার নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণ।তাছাড়া সরকার বাঁশখালীর হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যেই মেরিন ড্রাইভ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা শীঘ্রই বাস্তবায়ন হলে বাঁশখালীর উপকুল হবে শিল্প সমৃদ্ধ ও পর্যটন স্পষ্ট।
Leave a Reply